ঢাকা,মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রসঙ্গ: চকরিয়ায় মা-মেয়ে নির্যাতন

“রাঁধাও নাচল না, দেড় মণ ঘিও পুড়ল না”

:: এম.আর মাহমুদ ::

সিএনজি অটোরিক্সায় করে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে মা-মেয়ে সহ ৫ জনকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করে হারবাং ইউনিয়নের কিছু উৎশৃঙ্খল পাবলিক। এ সময় তাদেরকে কোমরে রশি বেঁধে পুরো রাস্তা হাঁটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। এভাবে অমানবিক নির্যাতনের পরে প্রথম পর্ব শেষ করে দ্বিতীয় পর্বে নির্যাতন করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও চৌকিদারেরা। এরপর গরু চুরি মামলা করে থানায় সোপর্দ্দ করেন মা-মেয়ে সহ ৫ জনকে। তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার পরও কারা ভোগও করেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সারাদেশে শুরু হয় প্রতিবাদের তুফান। পরে চকরিয়া আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদনের দায়িত্ব দেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মতিউল ইসলামকে। অবশেষে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার পর ওই ইউনিয়নের শাসকদলের সভাপতি ও চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজিব কুমার গ্রেফতারী পরওয়ানা জারী করেছেন। এদিকে জেলা প্রশাসক কর্তৃক ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনও আলোর মুখ দেখেনি। হয়তো তদন্ত কমিটি ভিকটিমদের জবানবন্দী নিতে পারেনি; না হয় এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ২০ দিন সময় অতিবাহিত করার কোন যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হয় না। ভিকটিম পারভীন বেগম বাদী হয়ে থানায় ইউপি চেয়ারম্যান মিরানসহ জ্ঞাত ও অজ্ঞাত ৩৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় পুলিশ এজাহারভূক্ত ৩ আসামীকে গ্রেফতার করলেও অন্যান্য আসামীরা পলাতক থাকায় পুলিশ আটক করতে পারেনি। এদিকে মামলার বাদীসহ ভিকটিমরা নানা হুমকি ধমকির কারণে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবী করেছেন পারভীন বেগম। হারবাং ইউনিয়নের অধিকাংশ আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতা-কর্মীর দাবী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জনগণের ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে এলাকায় বেশুমার অপকর্ম করে বেড়িয়েছে। শাসকদলের নাম ভাঙ্গিয়ে বনভূমি বিরান করেছে চেয়ারম্যান মিরান। এক্ষেত্রে বনবিভাগ দেখেও দেখেনি। কারণ তারা ওই চেয়ারম্যানের ভয়ে ‘কানে দিয়ে তুলা, পিঠে বেঁধে কূলা’। তবে পাপের পরিমাণ বেশি হওয়ায় মা-মেয়ে নির্যাতনের ঘটনার পর অনেকটা অনকাঙ্খিতভাবে ফাঁটা বাঁশে অন্ডকুশ আটকা পড়েছে। এখন অপরাধের দায় মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরী দূর্যোগকালীন সময়ে সরকারি ত্রাণের চাল নয় ছয় করতে গিয়ে মামলার আসামীও হয়েছে স্বীয় পদ থেকে বরখাস্তও হয়েছে। দুজনেই শাসক দলের নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান। আওয়ামীলীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা দাবী করেছেন, তারা দুজনের দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে নষ্ট করেছে। মূলতঃ অরাঁধুনীর হাতে পড়লে রুই মাছ যে কাঁদে তারই একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ। সবকথার শেষ কথা হচ্ছে সেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রবাদটি যথার্থতা খুঁজে পাওয়া গেল ‘রাঁধাও নাচল না, দেড় মণ ঘিও পুড়ল না।’

লেখক:  এম.আর মাহমুদ, দৈনিক সমকাল. চকরিয়া প্রতিনিধি।

সভাপতি -চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব, চকরিয়া, কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত: